শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে এখনো অনেক দেশেই বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলছে অনলাইন ক্লাস। তবে ইন্টারনেট ও অনলাইন ডিভাইসের অপ্রাপ্যতাসহ অনভ্যস্ততার দরুন এখনো অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ এই প্রক্রিয়ার সুযোগবঞ্চিত রয়ে গেছে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে অনলাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব, অনভ্যস্ততাসহ নানা অসুবিধা। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষ সঠিকভাবে শেষ করা নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার।
এছাড়া পরীক্ষা গ্রহণ করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। জাতিসংঘও গোটা পরিস্থিতিকে ‘বৈশ্বিক শিক্ষা জরুরি অবস্থা’ উল্লেখ করেছে। গত মাসের শুরুর দিকেই জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছিলেন, মধ্য জুলাইয়ে ১৬০টিরও বেশি দেশের স্কুল বন্ধ ছিল। এতে ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়ায় লম্বা সময়ের ব্যাঘাতের কারণে শিশুদের পুষ্টিহীনতা, বাল্যবিবাহ এবং লিঙ্গ বিষম্য বেড়ে যেতে পারে। ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই অনেক দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে। আবার অনেক দেশ এক্ষেত্রে এগোচ্ছে কৌশলী হয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনা সংক্রমণে শীর্ষে ও গোটা পৃথিবীতে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত। প্রতিদিনই দেশটিতে যেমন বিপুল পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তেমনি চলছে মৃত্যুর মিছিল। এখনো ভারতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে খারাপ সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। দুবার পেছানোর পর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব রাজ্যে প্রতিটি পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিমকোর্টও।
ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল জানিয়েছেন, চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে পঁচিশ লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর জন্য এই পরীক্ষাগুলোর আয়োজন হবে। অভিভাবকরা চাইছেন বলেই এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে বলে যুক্তি দিয়েছেন তিনি। তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অনেক রাজ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নয়। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি মাসে তার রাজ্যের কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হবে না।
সংক্রমণে এশিয়ায় চতুর্থ স্থানে থাকা বাংলাদেশ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তিন পরীক্ষা পিইসি, জেএসসি ও জেডিসি হবে না। এ ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এখন যেসব পরীক্ষা হবে না সেসব ক্লাসের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্র্ণে মূল্যায়ন পদ্ধতি খুঁজছে শিক্ষা প্রশাসন।
সংক্রমণে এশিয়ায় খারাপ অবস্থায় থাকা আরেক দেশ পাকিস্তান সরকার অবশ্য অভিভাবকদের আপত্তির ধার ধারতে নারাজ। এরই মধ্যে ইমরান খান সরকার জানিয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হবে দেশের সব স্কুল-কলেজ। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঠিক হবে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরুর রোডম্যাপ। যদিও জিও টিভি, দ্য ডনসহ দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, সরকারি এই সিদ্ধান্তে অভিবাভকরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষাবিদরাও বলছেন, সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় গত মাসেই খুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম দ্য আইল্যান্ড।
এদিকে বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া নিয়ে গত মাসেই তোড়জোড় শুরু করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে শিক্ষকরা তাকে সাফ জানিয়ে দেন, তারা এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তিত, শিক্ষাসূচি নিয়ে নয়। তবে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় নিয়ইয়র্কসহ কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবছে।
নিউইয়র্ক টাইমসসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাজ্য সরকার আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ দ্বৈত পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের দুটি ভাগে ভাগ করা হবে। একটি দল যখন সরাসরি স্কুলে যাবে, তখন অন্য দলটি অনলাইনে ক্লাস করবে। দ্বিতীয় দলটি স্কুলে এলে প্রথম দলটি আবার চলে যাবে অনলাইন কার্যক্রমে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক বিবৃতিতে স্কুলে সন্তানদের পাঠাতে অভিভাবকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) এক গবেষণায় জানিয়েছে, করোনায় বাড়ির চেয়ে স্কুলে শিশুদের আক্রান্তের আশঙ্কা কম। এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যে যেসব প্রাক-প্র্রাথমিক ও প্রাথমিক স্কুল খোলা হয়েছিল, সেখানে সংক্রমণের হার ছিল মাত্র ০.০১ শতাংশ। এর মধ্যে ৭০ শিক্ষার্থী ও ১২৮ জন স্কুলে নিয়োজিত কর্মকর্তা আক্রান্ত হন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সংক্রমণের ঝুঁঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি।
ইউরোপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানিও। এছাড়া করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল বলে চিহ্নিত চীনেও খুলেছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।